বাচ্চা মুরগির রানিখেত রোগ উপসর্গ ও চিকিৎসা

রানিখেত রোগ (Newcastle Disease) একটি মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ, যা পোল্ট্রির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটি প্যারামিক্সোভাইরাস (Paramyxovirus) দ্বারা সৃষ্ট হয় এবং বিশেষত বাচ্চা মুরগির মধ্যে এ রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। সঠিক সময়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিলে এটি মুরগির পুরো পালকে ধ্বংস করে দিতে পারে।

বাচ্চা রানিখেত 

রানিখেত রোগের প্রধান উপসর্গ:

বাচ্চা মুরগির মধ্যে রানিখেত রোগের উপসর্গগুলো তিনটি প্রধান রূপে প্রকাশ পায়:

১. শ্বাসযন্ত্রীয় সমস্যা:

হাঁসফাঁস বা শ্বাসকষ্ট।

নাক দিয়ে সর্দি বের হওয়া।

শ্বাস নেওয়ার সময় শব্দ হওয়া।

গলার স্বর ভারী বা কর্কশ হওয়া।


২. স্নায়বিক লক্ষণ:

মাথা একপাশে ঘোরানো বা কাত হয়ে থাকা।

অস্বাভাবিক ভাবে ঘুরপাক খাওয়া।

শরীর কাঁপা বা কুঁজো হয়ে থাকা।

দেহের ভারসাম্য হারানো।


৩. পরিপাকতন্ত্রীয় সমস্যা:

পাতলা ও পানিসহ ডায়রিয়া।

মলের মধ্যে সবুজ বর্ণ দেখা।

খাবারের প্রতি অনীহা।

ওজন কমে যাওয়া এবং দ্রুত দুর্বল হওয়া।


. অন্যান্য লক্ষণ:

হঠাৎ মৃত্যু (বিশেষত বাচ্চা মুরগির ক্ষেত্রে)।

ডিম পাড়ার পরিমাণ কমে যাওয়া বা ডিমে অস্বাভাবিকতা।

পালক নিস্তেজ হয়ে যাওয়া।

চোখে ফোলা বা প্রদাহ।


আরো পড়ুনঃ>>বড় মুরগির রানিক্ষেত রোগের উপসর্গ ও চিকিৎসা


রানিখেত রোগের কারণ:

ভাইরাস সংক্রমণ: প্যারামিক্সোভাইরাস।

পরিবেশ: অপরিষ্কার ও ঘনবসতিপূর্ণ খামার।

অপর্যাপ্ত টিকা প্রদান।


প্রাণীর অবাধ চলাচল: সংক্রমিত মুরগির সংস্পর্শ।

পানীয় বা খাদ্য: দূষিত পানি বা খাবারের মাধ্যমে সংক্রমণ।



রানিখেত রোগের সংক্রমণ পদ্ধতি:

বায়ুবাহিত: সংক্রমিত মুরগির শ্বাস-প্রশ্বাস থেকে।

সংক্রমিত মল বা লালা: আক্রান্ত মুরগির মলের সংস্পর্শে এসে।

মানুষের মাধ্যমে: আক্রান্ত মুরগি ধরার পর পরিষ্কার না হলে।

ফিড ও পানি: দূষিত খাবার বা পানির মাধ্যমে।


রানিখেত রোগের চিকিৎসা:

রানিখেত রোগের সরাসরি কোনও নিরাময় নেই, তবে প্রতিরোধ এবং উপশম ব্যবস্থা গ্রহণ করে রোগের প্রকোপ কমানো যায়।

১. প্রতিরোধ ব্যবস্থা:

টিকাদান:

বাচ্চা মুরগির ৫-৭ দিন বয়সে লাসোটা ভ্যাকসিন।

২১-২৮ দিন বয়সে রানিখেত ভ্যাকসিন (ND Vaccine)।


পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা:

খামার নিয়মিত পরিষ্কার রাখা।

জীবাণুনাশক স্প্রে করা।


ফিড ও পানি:

পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ করা।

পানির পাত্র জীবাণুমুক্ত রাখা।


২. উপশম চিকিৎসা:

বায়োকেমিক্যাল সাপোর্ট:

আক্রান্ত মুরগির শ্বাসকষ্টের জন্য ভিটামিন সি এবং ইলেক্ট্রোলাইট মিশ্রিত পানি।

মাল্টিভিটামিন এবং খনিজ সম্পূরক।


অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের নিয়ম:

দ্বিতীয় সংক্রমণ ঠেকাতে অক্সিটেট্রাসাইক্লিন বা ডক্সিসাইক্লিন।


প্রাকৃতিক প্রতিকার:

হলুদের গুঁড়া ও মধু মিশ্রিত পানি।


. আক্রান্ত মুরগি পৃথক রাখা:

আক্রান্ত মুরগিকে তৎক্ষণাৎ আলাদা স্থানে রাখা।

সংক্রমণ প্রতিরোধে আক্রান্ত মুরগির মল এবং মৃতদেহ সঠিকভাবে ধ্বংস করা।


৪. সঠিক ওষুধ ব্যবস্থাপনা:

স্থানীয় ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করা।

ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো অ্যান্টিভাইরাল নেই, তবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাই রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।


রোগ প্রতিরোধের সেরা পদ্ধতি:

সময়মতো টিকা প্রদান।

খামারের সঠিক ব্যবস্থাপনা।

পুষ্টিকর খাদ্যের নিশ্চয়তা।

নতুন পাখি খামারে আনার আগে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন।


রানিখেত রোগ বাচ্চা মুরগির জন্য মারাত্মক হলেও সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। সঠিক টিকা প্রদান, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখা এবং আক্রান্ত মুরগির দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করলে এ রোগের ক্ষতি অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব।


Comments

Popular posts from this blog

মহিষের মাংসে কি কি পুষ্টিকর উপাদান এবং ভিটামিন আছে

হরিণের মাংস খাওয়ার উপকারিতা

মুরগির মাংস মানুষের দেহের জন্য কতটা উপকারী