দেশি হাঁস পালনের সঠিক পদ্ধতি ও প্রাথমিক চিকিৎসা


দেশি হাঁস 

১. হাঁস পালনের উপযোগী জাত নির্বাচন:

উদ্দেশ্য অনুযায়ী জাত নির্বাচন করুন (ডিম বা মাংস উৎপাদন)।


২. খামারের অবস্থান:

পানি ও খাদ্যের সহজলভ্যতা বিবেচনা করে খামারের স্থান নির্ধারণ করুন।

খামারটি যেন বন্যপ্রাণী এবং শত্রু প্রাণীদের থেকে সুরক্ষিত থাকে।


৩. হাঁস রাখার ঘর বা শেড তৈরি:

প্রতিটি হাঁসের জন্য ২-৩ বর্গফুট জায়গা নির্ধারণ করুন।

ঘরের ছাদ টিন বা খড় দিয়ে তৈরি করুন যা গরম বা ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারে।

শেডের ভেতরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা রাখুন।


৪. হাঁসের জন্য পুকুর বা পানির উৎস:

হাঁসের সাঁতার ও খাদ্য খোঁজার জন্য একটি পুকুর বা জলাশয় রাখুন।

পানির গভীরতা এমন রাখুন যাতে হাঁস নিরাপদে চলাচল করতে পারে।


. খাদ্য ব্যবস্থাপনা:

হাঁসের খাদ্যে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, খনিজ এবং ভিটামিনের সঠিক মিশ্রণ থাকতে হবে।

খাদ্য: ধানের কুঁড়া, চালের কুঁড়া, ভুট্টা, সরিষার খইল, এবং রেডিমেড হাঁসের খাদ্য।

দিনে ২-৩ বার খাদ্য সরবরাহ করুন।

আরো পড়ুনঃ>> রাজহাঁস পালন পদ্ধতি

৬. ডিম উৎপাদন বাড়ানোর কৌশল:

ডিম পাড়ার সময় পর্যাপ্ত প্রোটিনযুক্ত খাদ্য সরবরাহ করুন।

ডিম পাড়ার জায়গাটি আরামদায়ক এবং পরিষ্কার রাখুন।


৭. হাঁসের স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা:

হাঁসের শেড ও পুকুর নিয়মিত পরিষ্কার করুন।

প্রতিদিন হাঁসের শরীরের ও আচরণের উপর নজর রাখুন।


হাঁসের প্রাথমিক চিকিৎসা:

১. রোগ প্রতিরোধ:

নিয়মিত টিকা প্রদান করুন (যেমন হাঁস প্লেগ, কলেরা)।

খাদ্যে ভিটামিন ও খনিজের অভাব যেন না হয় তা নিশ্চিত করুন।


২. পুষ্টিহীনতা বা দুর্বলতা:

ভিটামিন মিশ্রিত পানি সরবরাহ করুন।

প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য বাড়ান।


৩. হাঁস প্লেগ:

লক্ষণ: ডায়রিয়া, খাওয়ার অনীহা, মৃত অবস্থা।

চিকিৎসা: দ্রুত টিকা প্রদান করুন এবং আক্রান্ত হাঁসকে আলাদা করুন।


৪. হাঁসের পায়ের সমস্যা:

পায়ের ক্ষত বা ফুলে গেলে এন্টিসেপটিক দিয়ে পরিষ্কার করুন।

পর্যাপ্ত ক্যালসিয়ামযুক্ত খাদ্য দিন।


৫. ডিম পাড়ার সমস্যা:

যথেষ্ট ক্যালসিয়াম ও মিনারেল খাবারে মিশিয়ে দিন।

বিশ্রাম ও সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করুন।


৬. শ্বাসকষ্ট বা সর্দি:

ঠাণ্ডা পরিবেশ এড়িয়ে হাঁসকে উষ্ণ জায়গায় রাখুন।

প্রয়োজন হলে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


৭. পোকামাকড় বা পরজীবীজনিত রোগ:

নিয়মিত হাঁসের দেহ ও ঘরের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।

এন্টি-প্যারাসাইটিক ওষুধ প্রয়োগ করুন।


৮. হাঁসের ঠোঁট বা চোখে ক্ষত:

লবণ পানিতে তুলা ভিজিয়ে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করুন।

প্রয়োজন হলে এন্টিবায়োটিক ক্রিম ব্যবহার করুন।


হাঁস পালন এবং চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ টিপস:

১. হাঁসের খাদ্যে পর্যাপ্ত পানি মেশান।


২. রোগ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


৩. হাঁসের ডিম সংরক্ষণের জন্য পরিষ্কার পরিবেশ বজায় রাখুন।


৪. প্রতিদিন হাঁসের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করুন।


৫. সঠিক পরিমাণে আলো ও তাপ নিশ্চিত করুন।


এই নিয়মগুলো মেনে হাঁস পালন করলে তা লাভজনক এবং স্বাস্থ্যকর হয়।


Comments

Popular posts from this blog

মহিষের মাংসে কি কি পুষ্টিকর উপাদান এবং ভিটামিন আছে

হরিণের মাংস খাওয়ার উপকারিতা

মুরগির মাংস মানুষের দেহের জন্য কতটা উপকারী