কোয়েল পাখি পালন ও চিকিৎসা
কোয়েল পাখি পালন বর্তমানে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ব্যবসা, কারণ এটি অল্প খরচে লাভজনক এবং কম জায়গায় করা সম্ভব। নিচে কোয়েল পাখি পালনের পদ্ধতি এবং চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
কোয়েল পাখি পালনের পদ্ধতি:
১. প্রজাতি নির্বাচন:
বাণিজ্যিক পালনের জন্য জাপানি কোয়েল প্রজাতি বেশি জনপ্রিয়।
ডিম উৎপাদনের জন্য মেয়ে কোয়েল এবং মাংস উৎপাদনের জন্য ছেলে কোয়েল নির্বাচন করুন।
২. খামারের অবস্থান নির্বাচন:
খামার স্থাপন করতে হবে জনবসতি থেকে দূরে।
পরিবেশ পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে।
পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচল নিশ্চিত করতে হবে।
৩. খাঁচা নির্মাণ:
কোয়েল পাখির জন্য তারের তৈরি খাঁচা ভালো।
খাঁচার মাপ প্রতি পাখির জন্য ১ বর্গফুট রাখুন।
খাঁচা এমনভাবে তৈরি করুন যাতে ডিম সহজে সংগ্রহ করা যায়।
৪. খাদ্য সরবরাহ:
প্রোটিন, ভিটামিন, এবং খনিজ সমৃদ্ধ খাদ্য দিতে হবে।
খাবারে ২০-২৪% প্রোটিন থাকতে হবে।
গম, ভুট্টা, সয়াবিন মিল, মাছের গুঁড়ো খাদ্য হিসেবে দিতে পারেন।
৫. পানির ব্যবস্থা:
সবসময় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করুন।
পানির পাত্র পরিষ্কার রাখুন।
৬. আলোর ব্যবস্থা:
দিনে ১৬-১৮ ঘণ্টা আলো নিশ্চিত করুন।
ডিম উৎপাদনের হার বাড়াতে নিয়মিত আলো প্রয়োজন।
৭. তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ:
আদর্শ তাপমাত্রা: ১৮-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শীতকালে গরম রাখার ব্যবস্থা এবং গরমকালে ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ:
প্রতিদিন নিয়মিত ডিম সংগ্রহ করুন।
ডিম ফ্রিজে বা শীতল স্থানে সংরক্ষণ করুন।
৯. প্রজনন পদ্ধতি:
প্রজননের জন্য ১টি পুরুষ কোয়েলের সঙ্গে ৩-৪টি মেয়ে কোয়েল রাখুন।
ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য ইনকিউবেটর ব্যবহার করুন।
১০. পরিচ্ছন্নতা রক্ষা:
খাঁচা, খাবার পাত্র, এবং পানির পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
রোগবালাই থেকে মুক্ত রাখতে সঠিক জীবাণুনাশক ব্যবহার করুন।
কোয়েল পাখির সাধারণ রোগ ও চিকিৎসা:
১. রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা:
নিয়মিত টিকা দিন।
মানসম্পন্ন খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করুন।
২. কোয়েলের সাধারণ রোগ:
ক. সালমোনেলোসিস:
লক্ষণ: ডায়রিয়া, দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা।
চিকিৎসা: অ্যান্টিবায়োটিক যেমন অক্সিটেট্রাসাইক্লিন বা এনরোফ্লক্সাসিন প্রয়োগ।
খ. ককসিডিওসিস:
লক্ষণ: রক্তাক্ত মল, ওজন কমে যাওয়া।
চিকিৎসা: ককসিডিওস্ট্যাট (যেমন অ্যামপ্রোলিয়াম) ব্যবহার করুন।
গ. রানি খেত (নিউক্যাসল রোগ):
লক্ষণ: গলা ঘুরানো, শ্বাসকষ্ট, হাঁচি।
চিকিৎসা: এই রোগের চিকিৎসা নেই, তবে টিকা দিয়ে প্রতিরোধ করা যায়।
ঘ. কলেরা:
লক্ষণ: জ্বর, তৃষ্ণা বৃদ্ধি, ফোলা।
চিকিৎসা: টেট্রাসাইক্লিন বা সুলফা ওষুধ প্রয়োগ।
ঙ. ভিটামিনের ঘাটতি:
লক্ষণ: পা বাঁকা, খুঁড়িয়ে চলা।
চিকিৎসা: খাদ্যে ভিটামিন এ, ডি, ই এবং ক্যালসিয়াম যোগ করুন।
৩. পরজীবী আক্রমণ:
লক্ষণ: পালক ঝরে যাওয়া, ওজন কমে যাওয়া।
চিকিৎসা: অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক ওষুধ প্রয়োগ এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা।
৪. শ্বাসযন্ত্রের রোগ:
লক্ষণ: শ্বাসকষ্ট, নাক দিয়ে পানি পড়া।
চিকিৎসা: টিলমাইকোসিন বা ডক্সিসাইক্লিন ব্যবহার।
৫. ফাউল পক্স:
লক্ষণ: শরীরে ফোঁড়া, ক্ষত।
চিকিৎসা: টিকা দেওয়া এবং আক্রান্ত পাখি আলাদা করা।
৬. ডিম পাড়ার সমস্যা:
লক্ষণ: ডিমের আকার ছোট, খোসা পাতলা।
চিকিৎসা: খাদ্যে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম এবং মিনারেল যোগ করুন।
রোগ প্রতিরোধে করণীয়:
খামার সবসময় পরিষ্কার রাখুন।
নতুন পাখি আনলে কোয়ারেন্টাইন করুন।
নিয়মিত ভ্যাকসিন দিন।
সঠিক তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা বজায় রাখুন।
রোগ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা করুন।
কোয়েল পাখি পালন সঠিকভাবে করলে এটি একটি লাভজনক এবং দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসা হতে পারে। নিয়মিত পরিচর্যা এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে পাখিগুলো স্বাস্থ্যবান থাকবে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়বে।
Comments
Post a Comment