লেয়ার মুরগি পালন, ডিম উৎপাদন ও প্রাথমিক চিকিৎসা
লেয়ার মুরগি পালন একটি লাভজনক কৃষি উদ্যোগ, যা সঠিক পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উন্নত ডিম উৎপাদনে সহায়তা করে। নিচে পয়েন্ট আকারে লেয়ার মুরগি পালন, ডিম উৎপাদন এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
লেয়ার মুরগি পালনের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি:
১. মুরগি নির্বাচন:
উন্নত জাতের লেয়ার মুরগি নির্বাচন করুন, যেমন হাইলাইন ব্রাউন, লোহম্যান, শেভার ইত্যাদি।
২. ঘর নির্মাণ:
পরিবেশবান্ধব, আলো-বাতাস চলাচল উপযোগী ঘর তৈরি করুন।
মুরগির সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ঘরের মাপ নির্ধারণ করুন (প্রতি বর্গফুটে ২-৩ মুরগি)।
৩. বিছানা প্রস্তুতি:
ঘরে শুকনা খড়, কাঠের গুঁড়া, বা ধানের তুষ বিছিয়ে রাখুন।
নিয়মিত বিছানা পরিষ্কার করুন।
৪. খাবার ও পানির ব্যবস্থা:
সুষম খাবার ও বিশুদ্ধ পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করুন।
খাবারে পর্যাপ্ত প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন থাকতে হবে।
লেয়ার মুরগির ডিম উৎপাদন প্রক্রিয়া:
১. উৎপাদন শুরু:
সাধারণত ১৮-২০ সপ্তাহ বয়সে লেয়ার মুরগি ডিম দিতে শুরু করে।
ডিম উৎপাদনের শীর্ষ সময়কাল ২৫-৭০ সপ্তাহ।
২. খাবারের গুরুত্ব:
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার (১৮-২০%) এবং ক্যালসিয়াম (৩.৫-৪%) সরবরাহ করুন।
পানি ও মিনারেল মিশ্রিত খাবার ব্যবহার করুন।
৩. পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ:
ঘরের তাপমাত্রা ২০-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখুন।
ঘরের আলো নিয়ন্ত্রণ করুন (১২-১৬ ঘণ্টা আলো দরকার)।
৪. ডিম সংগ্রহ:
প্রতিদিন ডিম সংগ্রহ করে পরিষ্কার স্থানে সংরক্ষণ করুন।
ভাঙা ডিম দ্রুত আলাদা করুন।
লেয়ার মুরগির পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনা:
১. টিকাদান:
নিয়মিত ভ্যাকসিনেশনের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ নিশ্চিত করুন (ম্যারেকস, নিউক্যাসল, আইবিডি)।
২. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা:
ঘর, খাবার-পাত্র, এবং পানির পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
মুরগির বিষ্ঠা পরিষ্কার রাখুন।
৩. মুরগি পর্যবেক্ষণ:
মুরগির ওজন, খাওয়ার অভ্যাস, এবং স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করুন।
অসুস্থ মুরগিকে দ্রুত আলাদা করুন।
৪. প্যারাসাইট নিয়ন্ত্রণ:
বাহ্যিক (উকুন) ও অন্তঃস্থ প্যারাসাইট নিয়ন্ত্রণের জন্য ড্রাগ ব্যবহার করুন।
প্রতি ৩-৪ মাস পরপর ডি-ওয়ার্মিং করুন।
লেয়ার মুরগির সাধারণ রোগ ও প্রাথমিক চিকিৎসা:
১. নিউক্যাসল রোগ:
লক্ষণ: ঘাড় বাঁকানো, খিঁচুনি।
প্রতিরোধ: ভ্যাকসিন প্রয়োগ।
চিকিৎসা: এ রোগের নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই; আক্রান্ত মুরগি আলাদা করুন।
২. আইবিডি (গামবোরো):
লক্ষণ: ডায়রিয়া, অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস।
প্রতিরোধ: ভ্যাকসিনেশন।
৩. কলেরা:
লক্ষণ: জ্বর, খাওয়া কমে যাওয়া।
চিকিৎসা: অক্সিটেট্রাসাইক্লিন বা সালফা ওষুধ ব্যবহার।
৪. রানীক্ষেত:
লক্ষণ: সর্দি, শ্বাসকষ্ট।
প্রতিরোধ: নিয়মিত টিকা।
৫. কৃমি সংক্রমণ:
লক্ষণ: ওজন কমে যাওয়া, ডিম কমে যাওয়া।
চিকিৎসা: ডি-ওয়ার্মিং ওষুধ প্রয়োগ।
৬. উকুন ও পোকামাকড়:
প্রতিরোধ: ঘর পরিষ্কার রাখা এবং কীটনাশক ব্যবহার।
লাভজনক লেয়ার মুরগি পালন টিপস:
১. অর্থনৈতিক পরিকল্পনা:
খাবার, ওষুধ এবং পরিচালনা খরচ হিসাব করে লাভ-ক্ষতি নিরূপণ করুন।
২. বাজারজাতকরণ:
স্থানীয় বাজারে ডিম বিক্রি করুন অথবা পাইকারি বাজারের সাথে যোগাযোগ করুন।
৩. বিকল্প আয়:
ডিমের পাশাপাশি মুরগির মল প্রক্রিয়াকরণ করে সার হিসেবে বিক্রি করুন।
লেয়ার মুরগি পালন যথাযথভাবে পরিচালিত হলে এটি একটি লাভজনক উদ্যোগ হতে পারে। সঠিক যত্ন ও ব্যবস্থাপনাই এর সাফল্যের চাবিকাঠি।
Comments
Post a Comment