গাধার প্রাথমিক রোগ ও চিকিৎসা
গাধা একটি কর্মক্ষম প্রাণী, তবে সঠিক যত্ন ও পরিচর্যার অভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। নিচে গাধার সাধারণ রোগ ও প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতি পয়েন্ট আকারে আলোচনা করা হলো।
গাধা১. পেটের সমস্যা (কোলিক):
লক্ষণ:
খাওয়া বন্ধ করা।
পেটের দিকে লাথি মারা বা গড়াগড়ি করা।
পেট ফুলে যাওয়া।
চিকিৎসা:
গাধাকে খাওয়ানো বন্ধ রেখে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি দিন।
বেকিং সোডা মিশ্রিত পানি খাওয়ানো যেতে পারে।
দ্রুত পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
২. চর্মরোগ:
লক্ষণ:
শরীরে চুলকানি বা ঘা।
ত্বকে ফোসকা বা লাল দাগ।
ত্বকের উজ্জ্বলতা হারানো।
চিকিৎসা:
আঘাতস্থানে অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম বা জীবাণুনাশক প্রয়োগ করুন।
ত্বকে পরজীবীর আক্রমণ হলে অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক স্প্রে ব্যবহার করুন।
নিয়মিত গোসল করিয়ে পরিষ্কার রাখুন।
৩. পেটের কৃমি:
লক্ষণ:
ওজন কমে যাওয়া।
ক্ষুধামন্দা।
মলদ্বার চুলকানো।
চিকিৎসা:
প্রতি ৩-৬ মাস অন্তর কৃমি নাশক ওষুধ খাওয়ান।
গাধার খাবারের জায়গা ও পানি পরিষ্কার রাখুন।
৪. ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ (FMD):
লক্ষণ:
মুখ ও পায়ের নরম ত্বকে ফোসকা।
খাবার খেতে সমস্যা।
ল্যাংড়া হয়ে চলা।
চিকিৎসা:
আক্রান্ত জায়গা পরিষ্কার করে লবণ পানি দিয়ে ধুয়ে অ্যান্টিসেপটিক লাগান।
আক্রান্ত গাধাকে অন্য গাধা থেকে আলাদা রাখুন।
রোগ প্রতিরোধে সময়মতো টিকা দিন।
৫. শ্বাসকষ্ট:
লক্ষণ:
শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
নাক দিয়ে পানি পড়া।
অস্বাভাবিক শব্দ করা।
চিকিৎসা:
গাধাকে ধুলাবালি মুক্ত পরিবেশে রাখুন।
ভিটামিন-সি যুক্ত খাদ্য সরবরাহ করুন।
পশুচিকিৎসকের মাধ্যমে ইনহেলার বা প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রয়োগ করুন।
আরো পড়ুনঃ>>গাধা পালন পদ্ধতি
৬. গুটি বসন্ত (Pox):
লক্ষণ:
শরীরে ছোট ছোট গুটি।
জ্বর ও ক্ষুধামন্দা।
গুটি থেকে পুঁজ পড়া।
চিকিৎসা:
আক্রান্ত স্থানে অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম লাগান।
পুষ্টিকর খাবার ও বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করুন।
টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।
৭. জ্বর:
লক্ষণ:
শরীর গরম হয়ে যাওয়া।
খাবারে অনাগ্রহ।
শরীর দুর্বল হওয়া।
চিকিৎসা:
ঠান্ডা পানি দিয়ে শরীর মুছে দিন।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিন।
তাপমাত্রা বেশি হলে পশুচিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ ব্যবহার করুন।
৮. খুরার রোগ (Laminitis):
লক্ষণ:
খুর ফুলে যাওয়া।
পায়ে ব্যথা বা ল্যাংড়া হয়ে চলা।
কাজ করতে অনীহা।
চিকিৎসা:
খুর পরিষ্কার করে জীবাণুনাশক প্রয়োগ করুন।
মাটির পরিবর্তে নরম তৃণভূমিতে রাখুন।
খাদ্যে ক্যালসিয়াম ও মিনারেলের পরিমাণ বাড়ান।
৯. ডায়রিয়া:
লক্ষণ:
অতিরিক্ত তরল মল ত্যাগ।
শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া।
খাবার খেতে অনীহা।
চিকিৎসা:
খাবার বন্ধ রেখে শুধু বিশুদ্ধ পানি দিন।
ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন (ORS) খাওয়াতে পারেন।
যদি অবস্থা গুরুতর হয়, পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
১০. ঘামাচি বা তাপজনিত অসুস্থতা:
লক্ষণ:
অতিরিক্ত ঘাম হওয়া।
শরীরে দুর্বলতা।
ত্বকে ফোসকা।
চিকিৎসা:
গাধাকে ঠান্ডা পরিবেশে রাখুন।
শরীর মুছে দিন এবং ঠান্ডা পানি সরবরাহ করুন।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিন।
১১. পরজীবীর আক্রমণ:
লক্ষণ:
ত্বকে চুলকানি বা ক্ষত।
শরীরের ওজন কমে যাওয়া।
অতিরিক্ত চুল পড়া।
চিকিৎসা:
নিয়মিত অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক ওষুধ ব্যবহার করুন।
ঘর ও আশপাশের জায়গা পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন।
১২. চোখের রোগ:
লক্ষণ:
চোখ লাল হয়ে যাওয়া।
পানি পড়া।
গাধার দৃষ্টি কমে যাওয়া।
চিকিৎসা:
চোখে নরম কাপড়ে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে দিন।
যদি সংক্রমণ হয়, পশুচিকিৎসকের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করুন।
১৩. গর্ভধারণজনিত জটিলতা:
লক্ষণ:
প্রসবের সময় ব্যথা বেড়ে যাওয়া।
অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ।
চিকিৎসা:
গর্ভবতী গাধার জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্য ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করুন।
প্রসবকালীন সমস্যায় পশুচিকিৎসকের সহায়তা নিন।
১৪. মাংসপেশির ব্যথা:
লক্ষণ:
গাধা হঠাৎ কাজ বন্ধ করে দেয়।
চলাচলে সমস্যা।
চিকিৎসা:
গাধাকে বিশ্রাম দিন।
পেশিতে হালকা মালিশ করতে পারেন।
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য দিন।
গাধার প্রাথমিক চিকিৎসায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি, নিয়মিত পরিচর্যা ও টিকা নিশ্চিত করলে রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
Comments
Post a Comment