ব্রয়লার মুরগির সাধারণ রোগসমূহ ও তাদের ওষুধের তালিকা

ব্রয়লার মুরগির সাধারণ রোগসমূহ ও তাদের ওষুধের তালিকা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

ঔষধ

১. ভাইরাসজনিত রোগঃ

(১) নিউক্যাসল রোগ (Ranikhait disease):
লক্ষণ:

  • হঠাৎ মৃত্যু
  • শ্বাসকষ্ট, হাঁচি, ঘাড় বেঁকে যাওয়া
  • ডায়রিয়া (সবুজ বা হলুদ বর্ণের)
    ওষুধ:
  • নিউক্যাসল ভ্যাকসিন (LaSota, BCRDV)
  • এন্টিবায়োটিক (সেকেন্ডারি সংক্রমণ রোধে – টাইলোসিন, ডক্সিসাইক্লিন)
  • ইলেক্ট্রোলাইট ও ভিটামিন

(২) বার্ড ফ্লু  (Avian Influenza):
লক্ষণ:

  • দ্রুত মৃত্যু
  • ফুলে যাওয়া মাথা ও ঝুলে পড়া ঝুঁটি
  • রক্ত মিশ্রিত ডায়রিয়া
    ওষুধ:
  • প্রতিরোধের জন্য H5N1 ভ্যাকসিন
  • এন্টিবায়োটিক (সেকেন্ডারি সংক্রমণের জন্য – টেট্রাসাইক্লিন, এনরোফ্লক্সাসিন)
  • পুষ্টিকর খাদ্য ও ইমিউন বুস্টার

(৩) গামবোরো রোগ (Infectious Bursal Disease - IBD):
লক্ষণ:

  • বিষণ্ণতা ও খাবার খেতে না চাওয়া
  • সাদা ও পানির মতো ডায়রিয়া
  • বুকে ও পায়ে রক্ত জমাট
    ওষুধ:
  • গামবোরো ভ্যাকসিন
  • মাল্টিভিটামিন ও ইলেক্ট্রোলাইট
  • এন্টিবায়োটিক (সেকেন্ডারি সংক্রমণের জন্য – এমোক্সিসিলিন, ডক্সিসাইক্লিন)

২. ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগঃ

(১) সালমোনেলা (Pullorum Disease, Fowl Typhoid)
লক্ষণ:

  • সাদা ডায়রিয়া
  • দুর্বলতা ও বৃদ্ধির ধীরগতি
  • ফুসফুস ও অন্ত্রে প্রদাহ
    ওষুধ:
  • সালমোনেলা প্রতিরোধী টিকা
  • এন্টিবায়োটিক (অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, এনরোফ্লক্সাসিন)
  • জীবাণুনাশক পানি ও খাদ্যে মিশ্রণ

(২) কোলিব্যাসিলোসিস (Colibacillosis):
লক্ষণ:

  • শ্বাসকষ্ট
  • গুটি গুটি গায়ে ঘা
  • বিষণ্ণতা ও ওজন কমে যাওয়া
    ওষুধ:
  • এন্টিবায়োটিক (ডক্সিসাইক্লিন, এনরোফ্লক্সাসিন)
  • মাল্টিভিটামিন ও প্রোবায়োটিক

(৩) মাইকোপ্লাজমোসিস (CRD - Chronic Respiratory Disease):
লক্ষণ:

  • শ্বাসকষ্ট ও নাক দিয়ে পানি পড়া
  • খাবার কম খাওয়া ও ওজন কমে যাওয়া
  • চোখ লাল হওয়া
    ওষুধ:
  • টাইলোসিন, স্পাইরামাইসিন, ডক্সিসাইক্লিন
  • মাল্টিভিটামিন ও ইমিউন বুস্টার

৩. ছত্রাকজনিত রোগঃ

(১) এসপারজিলোসিস (Aspergillosis):
লক্ষণ:

  • শ্বাসকষ্ট ও হাঁচি
  • দুর্বলতা ও খাদ্যে অরুচি
  • ফুসফুসে দাগ ও সংক্রমণ
    ওষুধ:
  • ফাংগিসাইড (নিস্ট্যাটিন, কেটোকোনাজোল)
  • জীবাণুমুক্ত পরিবেশ ও ফ্রেশ ফিড সরবরাহ

৪. পরজীবীজনিত রোগঃ

(১) কোকসিডিওসিস (Coccidiosis):
লক্ষণ:

  • রক্ত মিশ্রিত ডায়রিয়া
  • বিষণ্ণতা ও দ্রুত ওজন কমে যাওয়া
  • পায়ের খড়খড়ে ভাব
    ওষুধ:
  • কোকসিডিওস্ট্যাট (অ্যামপ্রোলিয়াম, সুলফাকুইনক্সালিন)
  • প্রোবায়োটিক ও ইলেক্ট্রোলাইট

(২) ওয়ার্ম ইনফেকশন (Worm Infestation):
লক্ষণ:

  • ওজন কমে যাওয়া
  • খাদ্যে অনীহা
  • ডায়রিয়া
    ওষুধ:
  • ডিওয়ার্মার (এলবেন্ডাজোল, ফেনবেন্ডাজোল)
  • নিয়মিত কৃমির ওষুধ প্রয়োগ



৫. অপুষ্টিজনিত রোগঃ

(১) রিকেটস (Rickets):
লক্ষণ:

  • হাড় নরম হয়ে যাওয়া
  • খোঁড়ানো ও দুর্বলতা
  • ডিমের খোসা পাতলা হওয়া
    ওষুধ:
  • ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস সাপ্লিমেন্ট
  • ভিটামিন D3 সমৃদ্ধ খাদ্য

(২) ভিটামিন E ও সেলেনিয়ামের অভাব:
লক্ষণ:

  • খিঁচুনি
  • শরীর কাপতে থাকা
  • বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যাওয়া
    ওষুধ:
  • ভিটামিন E ও সেলেনিয়াম সাপ্লিমেন্ট

৬. বিষক্রিয়াজনিত রোগঃ

(১) মাইকোটক্সিকোসিস (Mycotoxicosis - ছত্রাকজনিত বিষক্রিয়া):
লক্ষণ:

  • খাদ্যে অনীহা
  • ডায়রিয়া ও দুর্বলতা
  • লিভারের ক্ষতি
    ওষুধ:
  • টক্সিন বাইন্ডার
  • মাল্টিভিটামিন ও ইমিউন বুস্টার

৭. পরিবেশগত রোগঃ

(১) হিট স্ট্রেস (Heat Stress):
লক্ষণ:

  • হাঁপানো
  • পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়া
  • ডিমের উৎপাদন কমে যাওয়া
    ওষুধ:
  • ইলেক্ট্রোলাইট ও ভিটামিন C

(২) ঠান্ডাজনিত রোগ:
লক্ষণ:

  • শ্বাসকষ্ট ও নাক দিয়ে পানি পড়া
  • দুর্বলতা ও ওজন কমে যাওয়া
    ওষুধ:
  • পর্যাপ্ত উষ্ণ পরিবেশ
  • ইমিউন বুস্টার ও এন্টিবায়োটিক

ব্রয়লার মুরগির রোগ প্রতিরোধের জন্য সঠিক টিকা, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা জরুরি। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ওষুধ প্রয়োগ করলে মুরগির উৎপা

Comments

Popular posts from this blog

হাঁস কত দিনে ডিম পাড়ে এবং ডিম পাড়া হাঁসের সঠিক পরিচর্যা

মাংস উৎপাদনের জন্য লাভজনক হাঁসের জাত ও তাদের পালন পদ্ধতি

দেশি মুরগি কত দিনে ডিম পাড়ে এবং ডিম পাড়া মুরগি সঠিক পরিচর্যা