দেশি মুরগি কত দিনে ডিম পাড়ে এবং ডিম পাড়া মুরগি সঠিক পরিচর্যা

দেশি মুরগির ডিম পাড়ার সময়কাল ও পরিচর্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

ডিম পাড়া মুরগি

দেশি মুরগি কত দিনে ডিম পাড়ে?

  • সাধারণত দেশি মুরগি ৫-৬ মাস বয়সে প্রথম ডিম পাড়া শুরু করে।
  • কিছু জাতের মুরগি ৬-৭ মাস বয়সেও ডিম দেওয়া শুরু করতে পারে।
  • একবার ডিম পাড়া শুরু হলে প্রতিদিন বা একদিন পরপর ডিম দেয়।
  • প্রাকৃতিকভাবে ডিম পাড়ার হার ২০-২৫টি ডিমের পর এক বিরতি নেয়।
  • বছরে একটি দেশি মুরগি ৮০-১৫০টি ডিম দিতে পারে।
  • ভালো খাদ্য ও পরিচর্যা পেলে ডিম পাড়ার হার বৃদ্ধি পায়

ডিম পাড়া মুরগির সঠিক পরিচর্যাঃ

১. খাদ্য ব্যবস্থাপনা:

সুষম খাদ্য সরবরাহ করুন:

  • মুরগিকে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন ও মিনারেলযুক্ত খাদ্য দিতে হবে।
  • খাদ্যের মধ্যে ভুট্টা, গম, ধান, খৈল, মাছের গুঁড়া, শাকসবজি ও ক্যালসিয়ামযুক্ত খাদ্য রাখতে হবে।
  • প্রতিদিন ১০০-১২০ গ্রাম খাদ্য মুরগির জন্য প্রয়োজন।

অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম ও মিনারেল দিন:

  • ডিমের খোসা শক্ত রাখতে ঝিনুকের গুঁড়া, চুনের গুঁড়া ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট দেওয়া যেতে পারে।
  • দিনে অন্তত ৩-৫ গ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন।

পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করুন:

  • মুরগির শরীরে পানির অভাব হলে ডিম পাড়ার হার কমে যায়
  • প্রতিদিন পরিষ্কার ও টাটকা পানি সরবরাহ করতে হবে।
  • পানির সঙ্গে ভিটামিন ও মিনারেল মিশিয়ে দিলে মুরগির উৎপাদনশীলতা বাড়বে।

২. বাসস্থান ও লাইটিং ব্যবস্থাপনাঃ

পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ খামার বা ঘর তৈরি করুন:

  • মুরগির ঘর শুকনো ও আলো-বাতাস চলাচল উপযোগী হতে হবে।
  • প্রতি ৫-৬টি মুরগির জন্য ১ বর্গফুট জায়গা রাখতে হবে।
  • খামারে পর্যাপ্ত আলো ও বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখা জরুরি।

উপযুক্ত তাপমাত্রা বজায় রাখুন:

  • গরমকালে সঠিকভাবে বাতাস চলাচল নিশ্চিত করুন।
  • শীতকালে মুরগির ঘর নরম কাপড় বা খড় দিয়ে ঢেকে দিন
  • মুরগির জন্য ১৭-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উপযুক্ত।

লাইটিং সময় বৃদ্ধি করুন:

  • দিনে ১৪-১৬ ঘণ্টা পর্যাপ্ত আলো দিলে ডিম পাড়ার হার বাড়বে।
  • রাতে লো পাওয়ারের LED লাইট ব্যবহার করা যেতে পারে।

৩. স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধঃ

নিয়মিত টিকা ও ওষুধ দিন:

  • নিউক্যাসল, গামবোরো, রানীক্ষেত ও মাইট টিকা দিতে হবে।
  • মাসে অন্তত একবার ডিওর্মিং (পেটের কৃমির ওষুধ) দিতে হবে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন:

  • মুরগির ঘর নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করতে হবে
  • ব্যবহৃত পানি ও খাদ্যের পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে

রোগের লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করুন:

  • মুরগি যদি খাবার কম খায়, দুর্বল দেখায় বা পাতলা পায়খানা করে, তবে দ্রুত চিকিৎসা করুন।
  • সন্দেহজনক অবস্থায় পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৪. প্রজনন ও ডিম সংগ্রহ ব্যবস্থাপনাঃ

বাচ্চা উৎপাদনের জন্য প্রজনন ব্যবস্থা করুন:

  • একটি মোরগের সঙ্গে ৮-১০টি মুরগি রাখতে হবে
  • ডিম ফার্টাইল হলে ২১ দিন তা দেওয়ার পর বাচ্চা ফুটবে

ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ:

  • ডিম নরম হাতে ও পরিষ্কার অবস্থায় সংগ্রহ করুন
  • বেশি সময় সংরক্ষণের জন্য ডিম ঠান্ডা ও শুকনো স্থানে রাখুন
  • নোংরা ডিম হলে শুকনো কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করুন (কখনো পানিতে ধোয়া উচিত নয়)।

দেশি মুরগিকে সঠিক পরিচর্যা, পুষ্টিকর খাদ্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ডিম উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। নিয়মিত টিকা, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও আলো-তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রণ মুরগির সুস্থতা নিশ্চিত করে। সঠিক যত্ন নিলে দেশি মুরগি সারা বছর ডিম দিতে পারে, যা খামারিদের জন্য লাভজনক হতে পারে।

Comments

Popular posts from this blog

হাঁস কত দিনে ডিম পাড়ে এবং ডিম পাড়া হাঁসের সঠিক পরিচর্যা

মাংস উৎপাদনের জন্য লাভজনক হাঁসের জাত ও তাদের পালন পদ্ধতি