হাঁস কত দিনে ডিম পাড়ে এবং ডিম পাড়া হাঁসের সঠিক পরিচর্যা
হাঁস সাধারণত ৫-৭ মাস বয়সে ডিম পাড়া শুরু করে। তবে হাঁসের জাত, পরিবেশ ও খাদ্যাভ্যাসের ওপর নির্ভর করে ডিম পাড়ার সময় পরিবর্তিত হতে পারে। নিচে হাঁসের ডিম পাড়ার সময় ও প্রভাবিতকারী বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলোঃ
১. বয়স: দেশি হাঁস সাধারণত ৫-৬ মাসে ডিম পাড়া শুরু করে, আর উন্নত জাতের হাঁস ৪.৫-৫ মাসে ডিম দিতে পারে।
২. জাতভেদে পার্থক্য: খাকি ক্যাম্পবেল ও ইন্ডিয়ান রানার হাঁস তুলনামূলক কম বয়সে বেশি ডিম পাড়ে।
৩. আবহাওয়া ও ঋতু: শীতকালে হাঁস কম ডিম পাড়ে, গরমের সময় উৎপাদন বাড়ে।
৪. খাদ্য ও পুষ্টি: হাঁসের খাবারে পর্যাপ্ত প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও মিনারেল না থাকলে ডিম উৎপাদন কমে যায়।
৫. আলো ও দিন-রাতের দৈর্ঘ্য: হাঁস পর্যাপ্ত আলো (প্রতি দিন ১৬ ঘণ্টা) পেলে বেশি ডিম পাড়ে।
৬. জলবায়ু ও পরিবেশ: শুষ্ক পরিবেশ ও ভালো যত্ন হাঁসের ডিম উৎপাদন বাড়ায়।
৭. স্বাস্থ্য ও রোগবালাই: হাঁস সুস্থ থাকলে ডিম বেশি দেয়, অসুস্থ হলে ডিম কমে যায়।
৮. জলাশয়ের প্রভাব: হাঁসের জন্য পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা থাকলে ডিম পাড়া ভালো হয়।
৯. বাচ্চা ফুটানোর প্রবণতা: কিছু জাতের হাঁস নিজে বাচ্চা ফুটানোর প্রবণতা দেখায়, যা ডিম উৎপাদনে প্রভাব ফেলে।
১০. চিন্তার অবস্থা: হাঁস যদি বেশি চাপে থাকে বা ভয় পায়, তাহলে ডিম কম পাড়ে।
ডিম পাড়া হাঁসের সঠিক পরিচর্যাঃ
হাঁসের ডিম উৎপাদন বাড়াতে ও তাদের সুস্থ রাখতে কিছু বিশেষ পরিচর্যা দরকার। নিচে হাঁসের পরিচর্যার মূল বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলোঃ
১. উপযুক্ত বাসস্থান ও নিরাপত্তাঃ
১. পর্যাপ্ত জায়গা রাখা: প্রতি ৪-৫টি হাঁসের জন্য কমপক্ষে ১ বর্গমিটার জায়গা দরকার।
২. পরিষ্কার ও শুকনো মেঝে: হাঁসের ঘর পরিষ্কার, শুকনো ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
৩. ভালো বায়ু চলাচল: গরমের দিনে অতিরিক্ত গরম যেন না লাগে, সেজন্য পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা দরকার।
৪. নিরাপত্তা ব্যবস্থা: শিয়াল, বেজি, কুকুর ইত্যাদি শত্রুদের হাত থেকে হাঁসদের রক্ষা করতে হবে।
৫. আলোকসজ্জা: হাঁসের ঘরে কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা করলে (প্রতি দিন ১৬ ঘণ্টা) ডিম উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
২. হাঁসের খাবার ও পুষ্টিঃ
১. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার: ডিম পাড়া হাঁসের জন্য প্রতিদিন ১৬-১৮% প্রোটিনযুক্ত খাবার দিতে হবে।
২. ক্যালসিয়াম সরবরাহ: হাঁসের খাবারে চুন, কুচি করা শামুক, ডিমের খোসা ও হাড়ের গুঁড়া মিশিয়ে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে হবে।
৩. শক্তির উৎস: চালের কুঁড়া, গম, ভুট্টা ইত্যাদি শক্তি বৃদ্ধির জন্য খাওয়ানো ভালো।
৪. পানির ব্যবস্থা: হাঁসের জন্য পরিষ্কার ও পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৫. খাবারের সময়সূচি: হাঁসকে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার দিলে তাদের ডিম উৎপাদন ভালো হয়।
৩. প্রজনন ও ডিম সংগ্রহঃ
১. উন্নত জাতের হাঁস পালন: বেশি ডিম উৎপাদনকারী জাত নির্বাচন করতে হবে।
২. পুরুষ-মহিলা হাঁসের অনুপাত: ১টি পুরুষ হাঁসের জন্য ৮-১০টি মেয়ে হাঁস রাখলে প্রজনন ভালো হয়।
৩. ডিম সংগ্রহের নিয়ম: সকালে ও বিকেলে ডিম সংগ্রহ করতে হবে, কারণ হাঁস সাধারণত সকালে ডিম পাড়ে।
৪. ডিম সংরক্ষণ: ১৫-১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ডিম সংরক্ষণ করলে ভালো থাকে।
৪. স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধঃ
১. নিয়মিত টিকা দেওয়া: হাঁসকে হাঁসকলেরা, রানীক্ষেত, কলেরা ইত্যাদি রোগের বিরুদ্ধে টিকা দিতে হবে।
২. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: হাঁসের ঘর, খাবারের পাত্র ও পানির পাত্র পরিষ্কার রাখতে হবে।
৩. পানি দূষণ মুক্ত রাখা: হাঁসের পানির উৎসে যেন কোনো রাসায়নিক বা দূষণ না থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. রোগ হলে চিকিৎসা: হাঁস অসুস্থ হলে দ্রুত পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৫. হাঁসের উৎপাদন বৃদ্ধি কৌশলঃ
১. আলোকসজ্জা নিয়ন্ত্রণ: কৃত্রিম আলো ব্যবহার করে ডিম উৎপাদন বাড়ানো যায়।
২. নিয়মিত খাবার পরিবর্তন: হাঁসের খাবারে মাঝে মাঝে পরিবর্তন এনে পুষ্টিমান ঠিক রাখতে হবে।
৩. সঠিক বয়সে ডিম পাড়া শুরু করা: বেশি কম বয়সে হাঁসকে ডিম পাড়তে বাধ্য করলে উৎপাদন কমে যেতে পারে।
৪. পরিবেশগত চাপ কমানো: হাঁসের চারপাশে কম শব্দ ও শান্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা দরকার।
৫. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পালন: হাঁসের ঘর, খাদ্য ও পরিচর্যা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে করলে ডিম উৎপাদন বেশি হয়।
হাঁসের ডিম উৎপাদন বাড়াতে সঠিক জাত নির্বাচন, উন্নত খাদ্য সরবরাহ, স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা দরকার। নিয়মিত পরিচর্যা ও সঠিক ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করলে হাঁসের ডিম উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, যা লাভজনক হাঁস পালন নিশ্চিত করবে।
Comments
Post a Comment