ফাউমি মুরগি ডিম পাড়ার সময়কাল এবং অধিক ডিম উৎপাদনের পদ্ধতি
ফাউমি মুরগি একটি জনপ্রিয় জাত, যা মূলত মিশর থেকে এসেছে। এটি দ্রুত ডিম উৎপাদনের ক্ষমতার জন্য বিখ্যাত। নিচে ফাউমি মুরগির ডিম পাড়ার সময়কাল এবং অধিক ডিম উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় পদ্ধতিগুলি আলোচনা করা হলো।
ফাউমি মুরগি ডিম উৎপাদন
ফাউমি মুরগি কত দিনে ডিম পাড়েঃ
১. ডিম পাড়ার শুরু:
ফাউমি মুরগি সাধারণত ২০-২২ সপ্তাহ বয়স থেকে ডিম পাড়া শুরু করে।
পরিবেশ, খাদ্য এবং যত্নের ওপর এই সময়কাল কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে।
২. ডিম পাড়ার সময়কাল:
ফাউমি মুরগি প্রায় ১০-১২ মাস পর্যন্ত নিয়মিত ডিম পাড়ে।
প্রতিদিন একটি ডিম পাড়ার হার ৭০-৮০% পর্যন্ত হতে পারে।
৩. উৎপাদন হার:
প্রতি বছর ফাউমি মুরগি ২০০-২৫০টি ডিম পাড়ে।
সঠিক ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন আরও বাড়ানো সম্ভব।
অধিক ডিম উৎপাদনের পদ্ধতিঃ
১. সঠিক খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ
-
পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ:
- প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান করতে হবে।
- প্রাপ্তবয়স্ক মুরগির জন্য মুরগির ফিডে অন্তত ১৬-১৮% প্রোটিন নিশ্চিত করা জরুরি।
-
পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ:
- মুরগিকে প্রতিদিন পরিষ্কার ও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি সরবরাহ করতে হবে।
- ডিম পাড়ার সময় পানির প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়।
২. আলোক ব্যবস্থাপনাঃ
-
আলোর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি:
- দিনে ১৪-১৬ ঘণ্টা আলো নিশ্চিত করা হলে ডিম পাড়ার হার বৃদ্ধি পায়।
- শীতকালে কৃত্রিম আলো ব্যবহার করে এই সময় বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
-
অন্ধকার সময়ের গুরুত্বঃ
- পর্যাপ্ত বিশ্রামের জন্য রাতে মুরগিকে ৮ ঘণ্টা অন্ধকারে রাখতে হবে।
৩. বাসস্থান ও পরিচ্ছন্নতাঃ
-
পর্যাপ্ত স্থান প্রদানঃ
- প্রতি মুরগির জন্য কমপক্ষে ১.৫-২ বর্গফুট স্থান প্রয়োজন।
- বেশি মুরগি একসঙ্গে রাখলে চাপের কারণে ডিম উৎপাদন কমে যেতে পারে।
-
পরিচ্ছন্ন পরিবেশঃ
- মুরগির খাঁচা ও আশপাশ সবসময় পরিষ্কার রাখা জরুরি।
- জীবাণুমুক্ত রাখতে নিয়মিত জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে হবে।
৪. স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাঃ
-
টিকা ও চিকিৎসাঃ
- নিয়মিত টিকা ও চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।
- রানি খেত বা নিউক্যাসল রোগ থেকে মুরগিকে সুরক্ষিত রাখতে বিশেষ নজর দিতে হবে।
-
পরজীবী নিয়ন্ত্রণঃ
- বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ পরজীবী নিয়ন্ত্রণের জন্য সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
- নিয়মিত ডিওয়ার্মিং করা জরুরি।
৫. উপযুক্ত প্রজনন ব্যবস্থাপনাঃ
-
জেনেটিক উন্নতিঃ
- ভালো প্রজনন সক্ষমতাসম্পন্ন মুরগি নির্বাচন করতে হবে।
- সেরা ফাউমি মুরগির বাচ্চা উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত পুরুষ-মুরগি নির্বাচন জরুরি।
-
প্রজনন পরিবেশঃ
- মুরগির প্রজননের সময় তাদের জন্য আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করা দরকার।
৬. ডিম সংগ্রহ ও সঞ্চালন পদ্ধতিঃ
-
ডিম সংগ্রহের সময়ঃ
- প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে ডিম সংগ্রহ করা উচিত।
- ডিম বেশি সময় খাঁচায় রেখে দিলে তা ভেঙে যেতে পারে।
-
ডিমের সঠিক সংরক্ষণঃ
- ডিম তাজা রাখতে শীতল এবং শুকনো জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে।
- ডিম সংরক্ষণের সময় খোসা ফেটে যাওয়া ডিমগুলো আলাদা করে ফেলা উচিত।
৭. স্ট্রেস কমানোঃ
- চাপমুক্ত পরিবেশঃ
- মুরগি যেন অপ্রয়োজনীয় শব্দ বা অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে চাপ অনুভব না করে।
- স্ট্রেস কমানোর জন্য সঠিক খাদ্য ও আলো ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
৮. নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও ডাটার সংরক্ষণঃ
-
উৎপাদন পর্যবেক্ষণঃ
- প্রতিদিন ডিম পাড়ার হার এবং মুরগির শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা দরকার।
- কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা নিতে হবে।
-
রেকর্ড রাখাঃ
- মুরগির উৎপাদন, খাদ্য গ্রহণ এবং টিকা সম্পর্কিত ডাটা সংরক্ষণ করা উচিত।
- ডাটার ভিত্তিতে ভবিষ্যতের জন্য সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা যাবে।
এই নির্দেশিকা মেনে চললে ফাউমি মুরগির ডিম উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা সম্ভব। সঠিক পরিচর্যা এবং ব্যবস্থাপনাই মুরগি পালন সফল করার মূল চাবিকাঠি।
Comments
Post a Comment