ফাউমি মুরগি পালন পদ্ধতি ও প্রাথমিক চিকিৎসা
ফাউমি মুরগি (Fayoumi) একটি বিশেষ ধরনের মুরগি যা মূলত মিশর থেকে উৎপত্তি। এটি দ্রুতবর্ধনশীল, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং কম খাবারে ভালো উৎপাদন দেয়। ফাউমি মুরগি পালনের সঠিক পদ্ধতি ও প্রাথমিক চিকিৎসার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
ফাউমি মুরগি
ফাউমি মুরগি পালনের পদ্ধতি:
১. জায়গা নির্বাচন:
খোলামেলা ও সুষম বাতাস চলাচলকারী জায়গা নির্বাচন করুন।
জমি উঁচু হতে হবে যাতে পানি জমে না।
২. খামারের কাঠামো:
খামারটি ভালোভাবে সুরক্ষিত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করার উপযোগী হতে হবে।
মেঝে কাদামুক্ত ও শুকনো রাখতে হবে।
৩. চারণভূমি ব্যবস্থা:
ফাউমি মুরগি চারণে অভ্যস্ত, তাই তাদের জন্য চারণভূমি থাকা জরুরি।
চারণভূমিতে ঘাস, ছোট পোকামাকড় ও শস্যদানা রাখতে পারেন।
৩. খাদ্য সরবরাহ:
ফাউমি মুরগি সাধারণত চাল, গম, ভুট্টা, চালের কুঁড়া, সরিষার খৈল ইত্যাদি খায়।
প্রয়োজনমতো মিনারেল ও ভিটামিন মিশ্রিত খাদ্য দিন।
দৈনিক খাদ্যের পাশাপাশি সবুজ ঘাস বা শাকসবজি সরবরাহ করুন।
৪. পানির ব্যবস্থা:
সব সময় পরিষ্কার পানির ব্যবস্থা রাখুন।
গরমের সময় ঠান্ডা পানি ও শীতে হালকা গরম পানি সরবরাহ করুন।
৫. আলোর ব্যবস্থা:
ডিম উৎপাদন বাড়ানোর জন্য খামারে প্রতিদিন ১৪-১৬ ঘণ্টা আলোর ব্যবস্থা করুন।
দিনের আলো কম হলে কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা করুন।
৬. সুস্থতা রক্ষা:
নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
মুরগির আবাসস্থল শুকনো ও জীবাণুমুক্ত রাখুন।
৭. ডিম সংগ্রহ:
ডিম দ্রুত সংগ্রহ করে নিরাপদ জায়গায় সংরক্ষণ করুন।
ডিম সংগ্রহের সময় মুরগির উপর চাপ সৃষ্টি করবেন না।
৮. বংশবিস্তার:
প্রাকৃতিকভাবে বাচ্চা ফোটানোর জন্য ফাউমি মুরগিকে সুযোগ দিন।
ভালো মানের ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন করুন।
ফাউমি মুরগির রোগ প্রতিরোধ:
ফাউমি মুরগি সাধারণত অনেক রোগ প্রতিরোধী হলেও কিছু রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সঠিক পদ্ধতিতে খামার পরিচালনা করলে রোগের প্রকোপ কমানো সম্ভব।
১. নিয়মিত ভ্যাকসিন প্রদান:
নির্ধারিত সময়ে মুরগিকে নিউক্যাসল, গামবোরো, মারে্কস প্রভৃতি রোগের ভ্যাকসিন দিন।
২. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা:
খাঁচা, খাবার ও পানির পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
আবাসস্থলে জীবাণুনাশক ব্যবহার করুন।
৩. পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল:
ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে খামারে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল নিশ্চিত করুন।
৪. পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ:
মশা, মাছি ও অন্যান্য পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
নিয়মিত কীটনাশক ব্যবহার করুন।
৫. অতিরিক্ত জনসংখ্যা এড়ানো:
খামারে অতিরিক্ত মুরগি রাখবেন না।
সঠিক অনুপাতে স্থান ও খাদ্যের ব্যবস্থা করুন।
ফাউমি মুরগির সাধারণ রোগ ও প্রাথমিক চিকিৎসা:
১. নিউক্যাসল রোগ (Ranikhet):
- লক্ষণ: ডানা ঝুলে যাওয়া, খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট।
- প্রতিকার:
- নির্ধারিত সময়ে ভ্যাকসিন দিন।
- আক্রান্ত মুরগি আলাদা করে রাখুন।
২. গামবোরো রোগ:
- লক্ষণ: ডায়রিয়া, অল্পখাওয়া, দুর্বলতা।
- প্রতিকার:
- আক্রান্ত মুরগি আলাদা করে রাখুন।
- ভ্যাকসিন প্রয়োগ করুন।
৩. কলেরা:
- লক্ষণ: খিঁচুনি, পায়খানায় রক্ত।
- প্রতিকার:
- পানির সাথে ওষুধ মিশিয়ে দিন।
- খামার জীবাণুমুক্ত করুন।
৪. পা ফুলে যাওয়া বা আঘাতজনিত সমস্যা:
- লক্ষণ: পায়ে ব্যথা বা ফুলে যাওয়া।
- প্রতিকার:
- ক্ষতস্থানে জীবাণুনাশক লাগান।
- পরিষ্কার জায়গায় রাখুন।
৫. কৃমির সমস্যা:
- লক্ষণ: ওজন কমে যাওয়া, খাবারে অনাগ্রহ।
- প্রতিকার:
- নিয়মিত কৃমির ওষুধ দিন।
- খাদ্যে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
৬. ব্রুডিং সমস্যাজনিত মৃত্যু:
- লক্ষণ: ঠান্ডাজনিত কারণে ছোট বাচ্চার মৃত্যু।
- প্রতিকার:
- নির্ধারিত তাপমাত্রায় বাচ্চাদের রাখুন।
- পর্যাপ্ত আলো ও তাপ নিশ্চিত করুন।
৭. পাখনির লালচে হওয়া বা ফোলাভাব:
- লক্ষণ: পাখনির নিচে ফোলা বা লালচে ভাব।
- প্রতিকার:
- এন্টিসেপ্টিক ব্যবহার করুন।
- আক্রান্ত মুরগিকে আলাদা করুন।
৮. ভিটামিনের অভাব:
- লক্ষণ: মুরগির শরীর দুর্বল, ডিম দেওয়া কমে যাওয়া।
- প্রতিকার:
- খাদ্যে ভিটামিন ও মিনারেলের পরিমাণ বাড়ান।
- প্রতিদিন তাজা সবুজ খাবার দিন।
৯. ক্লোকিং রোগ (Egg Bound):
- লক্ষণ: ডিম দেওয়ার সময় মুরগি কষ্ট পায়।
- প্রতিকার:
- আক্রান্ত মুরগির পেট হালকা গরম পানিতে ম্যাসাজ করুন।
- প্রয়োজনে ভেটেরিনারির পরামর্শ নিন।
ফাউমি মুরগি পালন সঠিক পদ্ধতিতে করলে এটি একটি লাভজনক ব্যবসা হতে পারে। মুরগির খাবার, বাসস্থান, পরিচ্ছন্নতা ও নিয়মিত ভ্যাকসিন প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ও প্রাথমিক চিকিৎসার বিষয়গুলো জানা থাকলে মুরগি সুস্থ থাকবে এবং উৎপাদন ভালো হবে।
Comments
Post a Comment